সংবাদ

videocard
নবীন উদ্যোক্তাদের নিয়ে নসীহা সেশন

২৭ আগস্ট, ২০২২

গত ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ রোজ মঙ্গলবার বাদ ফজর আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন নবীন উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২১-এ নির্বাচিত নবীন উদ্যোক্তাদের নিয়ে নসীহা সেশন আয়োজন করা হয়। জুম-এর মাধ্যমে আয়োজিত দিকনির্দেশনামূলক নসীহা সেশনে উপস্থিত ছিলেন আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ, আইএফএ কনসালটেন্সির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মুফতী ইউসুফ সুলতান ও সরোবর-এর চীফ মার্কেটিং অফিসার শরীফ আবু হায়াত অপু প্রমুখ।   শায়খ আহমাদুল্লাহর স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্যে তিনি কাকডাকা ভোরে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য উদ্যোক্তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে, দক্ষতা বাড়িয়ে পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার আহ্বান জানান। হালাল উপায়ে রিযক অনুসন্ধানের গুরুত্ব ও নতুন উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্বসহ ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তিনি মূল্যবান আলোচনা করেন।   শরীফ আবু হায়াত অপু মার্কেটিং সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি আলাদা আলাদা করে প্রোডাক্ট প্রমোশন ও প্রাইজ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কীভাবে ইসলামী শরীয়াহ মেনে চলা উচিত এবং কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে সাধারণত উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা ভুল করেন ও শরীয়াহ লঙ্ঘন করেন— সে ব্যাপারে আলোচনা করেন। বিষয়টিকে তিনি উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন।   মুফতী ইউসুফ সুলতান শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবসার যে দিকগুলো মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি, সে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। গ্রাহকদের হক প্রদানের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়ে ব্যত্যয় ঘটতে পারে এবং তা কীভাবে পরিপূর্ণরূপে রক্ষা করা যায়, এ বিষয়ে তিনি সবিস্তার আলোচনা করেন। যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসার অংশীদারদারদের হক নষ্ট হয়ে থাকে, সে ব্যাপারেও তিনি আলোচনা করেছেন। মুদারাবা ও মুশারাকার মূলনীতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন।   অতিথিদের আলোচনার পর ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বে উদ্যোক্তারা শরয়ী ও মাঠপর্যায়ের নানা সমস্যা সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। শায়খ আহমাদুল্লাহ-সহ সম্মানিত বিচারকগণ তাদের প্রশ্নের জবাব দেন।   নির্বাচিত উদ্যোক্তাগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা উপস্থিত আলেমদের আন্তরিক নসীহা যথাসাধ্য মেনে চলার অঙ্গীকার করেছেন। আল্লাহ তাদের তাওফিক দান করুন।

videocard
পিতৃহারা হলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

২৭ আগস্ট, ২০২২

প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহর বাবা মো. দেলোয়ার হোসেন ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গত ১৮ই আগস্ট, ২০২২ বৃহস্পতিবার রাত রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মো. দেলোয়ার হোসেন (রহিমাহুল্লাহ) আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারম্যান ছিলেন। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠার আগে থেকে তিনি বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে জড়িত ছিলেন। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী, পরোপকারী ও অত্যন্ত সজ্জন মানুষ ছিলেন। শায়খ আহমাদুল্লাহর বাবা মো. দেলোয়ার হোসেনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার বশিকপুরে। দীর্ঘদিন তিনি যশোর ও সাতক্ষীরায় ব্যবসা করেছেন। তাঁর ছয় সন্তানের মধ্যে শায়খ আহমাদুল্লাহ দ্বিতীয়। বাবার মাগফিরাতের জন্য সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। মৃত্যুর সময় শায়েখ আহমাদুল্লাহর পিতা দেলোয়ার হোসেনের বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

videocard
প্রবাসীদের আমন্ত্রণে জাপানে শায়খ আহমাদুল্লাহ

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণে জাপানে সফর করেছেন বিশিষ্ট দা'য়ী ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি প্রবাসীদের আয়োজনে বিভিন্ন মাহফিলে বয়ান করেন। জাপান-প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বেচ্ছসেবী সংস্থা ওয়ামস জাপানের উদ্যোগে ২০১৯ সালের ১৩ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর চার দিনের ইসলামিক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান আলোচক হিসেবে যোগ দেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। ১৩ সেপ্টেম্বর শুক্রবার টোকিওর কামাতা মসজিদে, ১৪ সেপ্টেম্বর ওঝি এলাকার হকতোপিয়া কনভেনশন হলে, ১৫ সেপ্টেম্বর জাপানের সীমান্তবর্তী এলাকা তাইয়্যেমা শি’র সিটি করপোরেশন মিলনায়তনে এবং ১৬ সেপ্টেম্বর টোকিওর চিবা মসজিদে শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে ইসলামি আলোচনা করেন। এসব আলোচনায় উপস্থিত দর্শকদের বিভিন্ন জিজ্ঞাসার জবাবও দেন তিনি। প্রবাসীদের আয়োজিত প্রতিটি অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিল উপচেপড়া। প্রতিটি অনুষ্ঠান প্রবাসীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় বাংলাদেশি মসজিদগুলোর ইমাম এবং গণ্যমান্য কমিউনিটি নেতারা অংশ নেন।

videocard
আবারো বেস্ট সেলার লেখকের তালিকার শীর্ষে শায়খ আহমাদুল্লাহ

৪ অক্টোবর, ২০২২

বিগত কয়েক বছর ধরেই বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকায় রয়েছে শায়খ আহমাদুল্লাহর ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম)-এর সকাল-সন্ধ্যার দু‘আ ও যিকর’ বইটি। অনলাইন বুকশপ রকমারির বিগত কয়েক বছরের বেস্ট সেলার বইয়ের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শায়খ আহমাদুল্লাহর এই বইটি ছাড়াও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত অন্য বইগুলোও রয়েছে সর্বোচ্চ বিক্রীত বইসমূহের তালিকায়।‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম)-এর সকাল-সন্ধ্যার দু‘আ ও যিকর’ বইটি এ পর্যন্ত কত কপি বিক্রি হয়েছে, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বইটির পরিবেশক নাফিউন-এর কর্ণধার আরিফুর রহমান জানান, ‘মাত্র সাড়ে তিন বছরেরও কম সময়ে বইটি তিন লক্ষাধিক কপি বিক্রি হয়েছে।’এখনো যে বইটি পাঠক-চাহিদার শীর্ষে রয়েছে, অনলাইন বুকশপ রকমারির সেপ্টেম্বরের দশজন বেস্ট সেলার লেখকের তালিকা দেখলে স্পষ্ট হয়। এতে শায়খ আহমাদুল্লাহ ১ নম্বরে রয়েছেন। রকমারির বিগত মাসগুলোর বেস্ট সেলার লেখকের তালিকায়ও শায়খ আহমাদুল্লাহ ছিলেন।এই পুস্তিকায় বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার বিভিন্ন দু‘আ ও যিকর সংকলন করা হয়েছে। আর্ট পেপারে প্রকাশিত বইটি দু‘আ ও যিকর সম্পর্কিত বিভিন্ন জ্ঞাতব্য উল্লেখ করা হয়েছে। আরবী পড়তে অক্ষমদের জন্য রয়েছে উচ্চারণের পাশাপাশি সরল অনুবাদও।আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত নাফিউন-পরিবেশিত বইটি পাওয়া যাবে রকমারি-ওয়াফিলাইফসহ অন্যান্য অনলাইন বুকশপে।

videocard
দাওয়াতি কাজে মালয়েশিয়া সফরে শায়খ আহমাদুল্লাহ

১৮ অক্টোবর, ২০২২

দীনি দাওয়াতের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া সফর করলেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের আমন্ত্রণে তিনি মালয়েশিয়া সফর করেন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কনফারেন্সে আলোচনা করেন। মূলত গত আগস্ট মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটি মালয়েশিয়া কতৃক আয়োজিত ইসলামিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ এবং দেশটির গ্র্যান্ড মুফতী, জাতীয় মসজিদের খতীবসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়ের কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত শায়খের পিতার মৃত্যুর কারণে সেটি আর সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে পুনরায় আমন্ত্রিত হয়ে তিনি কয়েকটি কনফারেন্সে যোগদানের জন্য মালয়েশিয়া গমন করেন। ৮ অক্টোবর ‘বাংলাদেশি পিপলস ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ নর্থ জোন মালয়েশিয়া কর্তৃক আয়োজিত তাফসীর প্রোগ্রামে তিনি অংশগ্রহণ করেন। এখানে আরো আলোচিক ছিলেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিল এই প্রোগ্রামে। এখানে প্রায় ২০ হাজার শ্রোতার সমাগম ছিল। শায়খ আহমাদুল্লাহ এই অনুষ্ঠানে সূরা নাহালের ১২৫-১২৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর পেশ করেন। তাফসীরের পরে তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের বিভিন্ন দীনি প্রশ্নের উত্তর দেন। ৯ অক্টোবর তিনি জহুর বারুর অস্টিন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত সীরাহ কনফারেন্সে যোগদান করেন। এখানকার বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটি অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন জহুর প্রদেশের সাবেক মুফতী ও জহুর সুলতানের ধর্মীয় উপদেষ্টা দাতু ড. নুহ বিন গাদুত। এছাড়াও আলোচনা করেছেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী। এখানে শায়খ আহমাদুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ১৫টি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। সব শেষে তিনি উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর সেশনে অংশ নিয়ে শ্রোতাদের প্রশ্নের উত্তর দেন। এখানে ৩ হাজার শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। ১০ অক্টোবর তিনি কুয়ালালামপুরের ম্যানহাটন বলরুম, বেরজায়া টাইমস স্কয়ারে দ্বিতীয় ইসলামিক কনফারেন্স ২০২২-এ অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশি মুসলিম কমিউনিটি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী ও মুফতী ইউসুফ সুলতান।

videocard
একটি করে ইসলামি বই কেনার আহ্বান শায়খ আহমাদুল্লাহর

১৯ অক্টোবর, ২০২২

প্রত্যেককে অন্তত একটি করে ইসলামি বই কেনার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ইসলামি বইমেলায় গিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি। এদিন সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিক এক বৈঠকে মেলায় আসা পাঠক ও দর্শনার্থীদের উদ্দেশে শায়খ বলেন, আমাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য হলো বই কেনা এবং আমাদের যেন বই পড়ার অভ্যাস হয়। এখানে এসে সেলফি তুললাম, ফেসবুকে কিছু লাইক কমেন্ট কামাই করলাম এটা যেন আমাদের লক্ষ্য বা টার্গেট না হয়। আসুন আমরা অবশ্যই বই পড়ার নিয়ত করি। বিশেষ করে নবী কারিম (স.)-এর জীবনীর ওপর অন্তত একটি বই আমাদের প্রত্যেকের পড়া উচিত। এসময় তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে এই আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং মেলার জন্য আরও বড় জায়গা দরকার বলে ফাউন্ডেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেজন্য উপস্থিত সকলকে বেশি বেশি মেলায় আসার এবং বই কেনার প্রতি উৎসাহিত করেন প্রখ্যাত এই স্কলার। যাতে মেলার জন্য আরও বড় জায়গা দরকার- তা প্রমাণ হয়। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) ১৪৪৪ হিজরি উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে চলছে মাসব্যাপী ইসলামি বইমেলা। গত ৮ অক্টোবর মেলার উদ্বোধন করনে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। মেলা শেষ হবে ৮ নভেম্বর। ইসলামি বইমেলা ইতোমধ্যে বইপ্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মেলায় পবিত্র কোরআনের অনুবাদ, তাফসির, হাদিস গ্রন্থসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর মৌলিক ও গবেষণামূলক গ্রন্থ স্থান পেয়েছে। এবার মেলায় ৬২টি ইসলামি প্রকাশনা অংশগ্রহণ করেছে।  মেলা উপলক্ষে বরাবরের মতো এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিটি বই ৩৫% কমিশনে বিক্রি করছে। তবে বিশেষ কিছু বইয়ে ৫০% থেকে ৭০% কমিশনেও বই বিক্রি করছে বিভিন্ন প্রকাশনী।সূত্র: ঢাকা মেইল, বাংলা ভিশন

videocard
শায়খ আহমাদুল্লাহ : তিনি যেভাবে বেড়ে উঠেছেন

২০ অক্টোবর, ২০২২

শায়খ আহমাদুল্লাহ— বিশিষ্ট ইসলামি ব্যক্তিত্ব। সুবিদিত ও বিদগ্ধ আলোচক। লেখালেখি, গবেষণা-আলোচনা, সভা-সেমিনারে লেকচার, নানামুখি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা, উন্মুক্ত ইসলামিক প্রোগ্রাম ও প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ এবং টিভি অনুষ্ঠানে সময় দেওয়াসহ বহুমুখী সেবামূলক কাজে সপ্রতিভ গুণী ও স্বনামধন্য এই আলেমেদ্বীন। দেশে-বিদেশে শিক্ষা, সেবা ও দাওয়াহ— ছড়িয়ে দিতে শায়খ আহমাদুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন’। করোনাকালীন সময়ে ও হালে তার প্রতিষ্ঠানটি সময়োপযোগী নানা উদ্যোগ নিয়ে সর্বমহলে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন তিনি। বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতার কারণে ডাক পান মধ্যপ্রাচ্যে। যোগ দেন সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামিক দাওয়াহ সেন্টারে। দাঈ ও অনুবাদক হিসেবে সেখানে কাজ করেন দীর্ঘ ৯ বছর। সেখানে থাকাকালীন-ই আর্তমানবতার সেবায় এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাঝে ইসলামের জ্ঞান-অভিজ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার নিজেকে সম্পৃক্ত ও নিয়োজিত রেখেছিলেন।  বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রমে ইতোমধ্যেই তিনি জাপান, ভারত ও আরব আমিরাত সফর করেছেন এবং একাধিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। ইসলাম নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি লেখালেখিও করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তার লেখা প্রকাশিত হয় প্রায় সময়। এছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে শতাধিক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। আরবিতেও প্রকাশিত হয়েছে তার বহু লেখাযোখা। শায়খ আহমাদুল্লাহ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের ভূমিপল্লী জামে মসজিদের খতিব। পাশাপাশি সেখানকার একটি মাদরাসা পরিচালনার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। কিছুদিন আগে ফেসবুক লাইভে তার সাক্ষাৎকার-জীবন্তিকা গ্রহণ করেন বিশিষ্ট আলোচক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুফতি রাফি বিন মুনির। পাঠকদের জন্য সেই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা পোস্ট। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটির শ্রুতিলিখন করেছেন মাওলানা হাবিবুল্লাহ বাহার। রাফি বিন মুনির : মুহতারাম, আপনার পড়াশোনা কোথায় কীভাবে করলেন— আমাদের খুব জানার ইচ্ছে। আপনি যদি আপনার মতো করে বলতেন...। শায়খ আহমাদুল্লাহ : জাযাকুমুল্লাহ। আপনি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নই করেছেন। কারণ আমাদের অনেক ভাইদের জানার দরকারও আছে। আমার জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর জেলা। জনাবওয়ালা সাহেব (রহ.)-এর নাম হয়তো শুনে থাকবেন। তাঁর বাড়ির পাশেই আমাদের বাড়ি। লক্ষ্মীপুরের নামকরা ঐতিহ্যবাহী মাদরাসা বড়তলী মাদরাসা হয়ে আমাদেরকে বাড়ি যেতে হয়। লক্ষ্মীপুরের বশিকপুর গ্রাম— যেটিকে ওলামায়ে কেরামের গ্রাম বলা হয়। বলা হয়ে থাকে- এখানের শুধু উমেদপুর বাড়িতেই দারুল উলুম দেওবন্দপড়ুয়া অনেক আলেম ছিলেন। সংখ্যাটায় আমার মনে হয় কিছুটা অত্যুক্তি হয়। কিন্তু যখন কবরস্থানে গিয়ে মাওলানা লেখা— অসংখ্য কবর দেখি, যেগুলি আমার জন্মেরও বহু আগের; বুঝতে পারি- একসময় বহু ওলামায়ে কেরাম এখানে ছিলেন। যদিও আগের সেই ঐতিহ্য এখন একেবারেই শূন্যের কোঠায়। আমার দ্বীনি পড়াশোনা আমার মা বাবা এবং চাচার হাতেই শুরু। যতদূর মনে পড়ে গ্রামের স্কুলে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়েছিলাম। এরপর বাবা নোয়াখালী জেলার প্রধান শহর মাইজদির অদূরে হরিনারায়ণপুরে অবস্থিত দানাপুর মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। যেটি প্রতিষ্ঠা করেছেন নোয়াখালীর প্রসিদ্ধ দানামিয়া হোটেলের মালিক। সেখানে নূরানির প্রাথমিক তিন জামাতে পড়াশোনা করি। এরপর লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বোয়ালিয়া মাদরাসায় উর্দুখানা পড়ি। এরপর আমি চলে যাই হাতিয়ায়। সেখানে ফয়জুল উলুম মাদরাসায় হাতিয়ার হুজুর (রহ.)-এর কাছে সরাসরি মিজান নাহবেমির পড়ি। যিনি মুফতি ফয়জুল্লাহ (রহ.)-এর সুযোগ্য শাগরিদ ছিলেন। আমার এখনও মনে পড়ে হাতিয়ার হুজুর (রহ.)-এর কাছে নিয়ে যাবার পর তিনি আমার নাম রেখেছেন। আমার নাম ছিল আহমাদ হুসাইন। তিনি বদলে রেখেছেন আহমাদুল্লাহ। বললেন আমরা আহলে বাইতকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু নামের শেষে হাসান-হুসাইন ও আলি জুড়ে দেওয়া শিয়াদের পদ্ধতি— যা আমাদের দেশে চলছে। আমরা শুধুই হাসান-হুসাইন কিংবা আলি রাখবো। কিন্তু নাম রাখলেই নামের শেষে এগুলো জুড়ে দেওয়া একটা সর্বব্যাপী ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) আবু বাকর ও উমর (রা.)-এর ক্ষেত্রে কিন্তু সেটা হচ্ছে না। যাই হোক, তিনি নামটা পরিবর্তন করে দিলেন। ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় হাতিয়ায় ভয়াবহ আকারে মানুষের প্রাণহানি হয়। আমরা আলহামদুলিল্লাহ বেঁচে যাই। সেখান থেকে ফেনী হয়ে চলে যাই— হাটহাজারি মাদরাসায়। আমি সেখানে হাফেজ মুফতি শহিদুল্লাহ সাহেব (রহ.)-এর পাশের রুমে সিট পাই। যতদিন হাটহাজারীতে ছিলাম, হাফেজ শহিদুল্লাহ সাহেবের খাদেম হিসেবে ছিলাম। যারা হাটহাজারি পড়েছেন, তারা জানেন- সেখানে হুজুরদের খাদেমদের বিরাট ‘পাওয়ার’ থাকে। আমারও ছিল, আমি পিচ্ছি ছিলাম। অন্য ছাত্ররা খুব টাইট হয়ে থাকতো। তারা জানতো আমি শহিদুল্লাহ সাহেবের খাদেম। আর খাদেমরা কোনো নোটিশ করে দিলে- সমস্যা হতে পারে। যাইহোক, সে এক মজার ইতিহাস। সেখান থেকে চলে এলাম যশোরের দড়াটানা মাদরাসায়। সেখান থেকে আমি বেফাক বোর্ডের শরহে বেকায়া বা সানুবিয়াহ (HSC) পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১০ম স্ট্যান্ড করি। মিশকাতে ৩য় স্ট্যান্ড করি। দাওরায়ও (মাস্টার্স) একই মাদরাসা থেকে ২য় স্ট্যান্ড করি। আলহামদুলিল্লাহ। মাওলানা আবদুল মালিক সাহেব হাফিযাহুল্লাহর মারকাজুদ দাওয়াহর গুণী শিক্ষক যাকারিয়্যা আবদুল্লাহ আর আমি হাটহাজারিতে একই রুমে ছিলাম। উভয়েই হাফেজ শহিদুল্লাহ সাহেবের খাদেম ছিলাম। তিনি আমার এক জামাত সিনিয়র ছিলেন। আহমাদ শফি সাহেব হুজুরের ছেলে আনাস মাদানিও যাকারিয়্যা আবদুল্লাহ ভাইদের জামাতে ছিলেন। আমরা পাশাপাশিই ছিলাম। দাওরার বছর যশোরে যাকারিয়্যা আবদুল্লাহ ভায়ের সঙ্গে পরীক্ষা দিই। তিনি সবসময় ফাস্ট হতেন। কিন্তু সে বছর তিনি অসুস্থ ছিলেন বলে ৫ম স্ট্যান্ড করেন। আমি ২য় হই। সবশেষে খুলনা দারুল উলুম থেকে ইফতা সম্পন্ন  করি। এই হলো আমার পড়াশোনা। অর্থাৎ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কওমি মাদরাসায়। রাফি বিন মুনির : আলহামদুলিল্লাহ। আমরা অনেক অজানা ইতিহাস জানলাম। সবচেয়ে ভালোলাগাটা এখানে ছিল যে, মুফতি ফয়জুল্লাহ রহ. হাতে গড়া আমাদের হাতিয়ার হযরত তিনি আপনার নামটা পরিবর্তন করে আহমাদুল্লাহ রেখেছেন। আর সেই নামটাই আজকে অনেক বরকতপূর্ণ নাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ কবুল করেছেন। আসলে বড়দের সবকিছু আমাদের বুঝে না আসলেও তারা আমাদের জন্য কল্যাণকর অনেক কিছু করে থাকেন। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো ইতিহাস আমরা জেনেছি। শায়খ, এরপর সম্ভবত আপনি বিদেশে গিয়েছিলেন? শায়খ আহমাদুল্লাহ : এখানে একটু বলি রাফি ভাই। আজকাল  ছাত্রদের সঙ্গে উসতাজদের তো সেরকম কোনো অন্তরঙ্গ বা রুহানি যে সম্পর্ক দরকার— তা একেবারেই নেই। আমার খুব মনে পড়ে— আমার জীবনে প্রথম যখন আমি বালেগও হইনি; বয়স বার কি তের ছুঁইছুঁই। এই বয়সে  মা-বাবাকে রেখে হাতিয়ার মতো দ্বীপ— যার চারপাশে সাগর আর সাগর ধু- ধু করছে। সি ট্রাক জাতীয় ফেরির মতো একটা বাহন তখন ছিল। এর বাইরে আর কিছু নেইও যাতায়াতের। প্রাণ নিয়ে যেতে হতো। মা-বাবাকে রেখে সেই প্রথম ঈদ করি হাতিয়া মাদরাসায়। আমার মনে আছে উসতাজের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা এই লেভেলের ছিল যে, আমি ঈদের সময় বাড়ি যাওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিলাম। ঈদ ওখানেই কাটতো। আমি না শুধু— আমার মতো বার তের বছর বয়সের অনেক ছেলেপেলে সেই সময়ে- এখন না ছোট ছেলেপেলে দুঃসাহসী হয়- মা বাবাকে রেখে এখানে থেকে গেছি। উসতাজের স্নেহ-ভালোবাসা যে কী জিনিস— তা এখনো খুব কাজ করে। আমার মনে হয় ছাত্রবন্ধুদের উচিৎ হবে- উসতাজের সঙ্গে রুহানি একটা সম্পর্ক রাখা। বিষয়টা খুব বেশি খেয়াল রাখা চাই। রাফি বিন মুনির : আমি যদি আপনার সঙ্গে একটু যুক্ত করি। আমাদের দেখলে অনেকে মনে করে—আমরা এভাবেই পড়াশোনা করে মানুষ হয়েছি বা এতটুকু পর্যন্ত এসেছি। আমার মনে আছে- হুজুরের কাপড় ধোয়া এরপর আয়রন করে দেওয়া বাজার করা থেকে নিয়ে— হিফজ খানার কথা বলছি- সবকিছু করতাম। তখন বুঝতামই না। আপনি যে সময়টার কথা বলছেন- ঠিক হয়তো বা বয়স দশ এগার বছর ছিল। আমাদের এ অবস্থায় আমরা এতটুকু খেদমত করেছি। আর এখনকার ছাত্ররা–আপনি যেমনটা বলছিলেন- তাদের সাহস বেশি। এ সাহসটা দেখা যাচ্ছে অনেক জায়গায় তাদের বেয়াদবে পরিণত করছে। এ কারণে ইলমের ফায়দাটা নেওয়া হচ্ছে না। এটা উচিৎ না। অবশ্যই ছাত্রদের  উসতাজের খেদমত করা দরকার। আপনি যদি এ ব্যাপারে কিছু বলতেন... শায়খ আহমাদুল্লাহ : হ্যাঁ, বলি। আমার মনে আছে- আমি যখন হাটহাজারিতে পড়ি তখন হাফেজ শহিদুল্লাহ সাহেব (রহ.)-এর মাঝে আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটা বিশেষ গুণ খুঁজে পেতাম। সেটা হলো- আজান হয়ে গেলে তিনি কাউকে আর চিনতেন না। আমরা জানি রাসুলুল্লাহ (সা.) বিশেষ কিছু হালতে আম্মাজান আয়িশা (রা.)-কেও চিনতে পারতেন না। হাদিসে আছে, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? বললেন, আয়িশা। বললেন, আয়িশা কে? বললেন, আবু বকরের মেয়ে। বললেন, আবু বকর কে? বললেন, আবু কুহাফার ছেলে। রাসুল কোনো কিছুই চিনতে পারছিলেন না। তো আমার উসতাজের মধ্যে তেমনটাই খুঁজে পেয়েছিলাম। আজান হয়ে গেলে তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। পাগলের মতো ছুটতেন মসজিদে। বাবরী চুল রাখতেন, তিনি এলোমেলো অবস্থায়ই ছুটতেন। গিয়ে বসতেন প্রথম কাতারে। ছাত্রদের কথা আমরা বলছি। কিন্তু আজ আমরা যারা উসতাজ রয়েছি- আমাদেরও ত্রুটির জায়গা রয়েছে। আমরা কিন্তু ছাত্রদের জন্য কাঁদি না। আমার মনে আছে, নাফহাতুল আরব হাফেজ শহিদুল্লাহ সাহেবের কাছে পড়েছি। তিনি হেদায়ার ক্লাসে কিতাবটার মৌখিক পরীক্ষা নিচ্ছিলেন। আমি একটা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারিনি; একটারও না। আমার এখনও মনে আছে, তিনি তখন ছেলে মানুষের মতো কেঁদে দিলেন। হুজুর তখন স্টেজে বসে আছেন, পাশে শত শত ছাত্র। হুজুর চট্টগ্রামের ভাষায় বললেন, “বাবা, তুঁই আঁর  খেদমত গইত্যে গইত্যে পরালেখা গরিন ন পারর। এইল্লা খেদমত আঁর গরা ন পরি বো”। হুজুর খুব রাগ হয়ে গেলেন। নিজেকে অপরাধী মনে করলেন যে, ছেলেটা আমার খেদমত করতে করতে এমন হয়েছে। আমার মনে আছে, সপ্তাহে দুই তিনবার পুরা এক বালতি কাপড় ধুতাম। রান্নাবান্না অর্থাৎ ডিম-টিম বাজি করতাম। বাসার সব কাজই করতাম। আলহামদুলিল্লাহ। উসতাজ সে সময় ধমক দিয়ে বললেন, ‘তুঁই আঁর খেদমত গরন ন পরিব, পরালেখা ভালা গরি গর।’ হজুর এ কথা বলার পর আমি চিন্তা করলাম যে, আমার এই জায়গায় ত্রুটি আছে। পড়ালেখায় আরো মনোযোগী হতে হবে। এরপর থেকে জীবনে কোনোদিন ক্লাসে সেকেন্ড হইনি। রাফি বিন মুনির : মাশাআল্লাহ। এভাবেই আপনি আমাদের কাছে ভালোবাসার হয়ে উঠেছেন। আমাদের একজন দর্শকের মতামত আপনাকে নিয়ে “আহমাদুল্লাহ ভাইকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। উনার মাঝে ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। উনার সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে কারো সমালোচনা না করে কোরআন এবং হাদিস থেকে ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরেন। জাযাকাল্লাহ খইরান”। আমি আর কিছু বলতে চাই না। আশা করি আপনি শুনেছেন। আমরাও আপনাকে এজন্যেই ভালোবাসি। ভাই সুন্দর লিখেছেন। অনেকেই তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন। আচ্ছা মুহতারম, একটা বিষয় জানতে চাই তারপর সম্ভবত বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, পরে আবার কিভাবে ফিরে এলেন? শায়খ আহমাদুল্লাহ : পরপরই আমি যাই নি। আমি পড়ালেখা করার পর কর্মজীবন শুরু হয়েছে। বেফাকে ভালো ফলাফলের সুবাধে দারুর রাশাদের বর্তমান প্রিন্সিপাল ও প্রতিষ্ঠাতা হজরত মাওলানা সালমান হাফিযাহুল্লাহ আমাকে সেখানে নিযুক্ত করেন। সেখানে আরেক গল্প হচ্ছে- আমার বাবা যশোরে ব্যবসা করতেন। উনাদের গ্রামের বাড়ি নলতাতে আমরা ভাড়া থাকতাম। সেই থেকে হাতিয়া থাকতেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। সে বহু আগের কথা। যাইহোক পরবর্তীতে আমার শরহে বেকায়া, মিশকাত ও দাওরার রেজাল্টটা যখন ভালো হয়, হুজুর অফার করলেন দারুর রাশাদে শিক্ষকতার জন্য। দারুর রাশাদে শিক্ষকতার মধ্য দিয়েই কর্মজীবন শুরু। প্রথম মিটিংয়েই আমাকে নাজেমে দারুল ইকামা বানিয়ে দেওয়া হল। আমার মুখে অল্প কটা দাড়ি গজিয়েছে মাত্র। দারুর রাশাদ সম্পর্কে আপনারা জানেন, এটা বয়স্কদের মাদরাসা। সেখানে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও স্টুডেন্টরা পড়ে। এসএসসির নিচে তো কেউই নেই। আমি হলাম তাদের উসতাজই শুধু না, হোস্টেল সুপারও। যাইহোক তিন বছর সেখানে শিক্ষকতা করলাম। এর মাঝে আমার ইমামতি হল মণিপুরে। বর্তমানে উমায়ের কোব্বাদী নামের একজন আলিমকে আপনারা অনেকেই চেনেন। উমায়ের কোব্বাদীকে আমিই দিয়ে গিয়েছি। তিন মাসের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার সময় উমায়ের ভাইকে দিয়ে গেলাম। পরে আমি বললাম, আমি আর আসছি না। আপনিই থাকেন। এখনও উমাইর কোব্বাদী সেই মসজিদে আছেন। এ মসজিদে যাওয়া নিয়ে সালমান সাহেবের সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। শেষে আমি ইস্তফা দিয়ে আরজাবাদে চলে আসি। আরজাবাদে রেজাউল করিম ইসলামাবাদী (রহ.) সহ বড় বড় উলামায়ে কেরামের সঙ্গে দাওরায়ে হাদিসে খেদমত করার সুযোগ পাই। ইফতার ছাত্র ভাইদের সঙ্গে বসার তৌফিক হয়। মিশকাতসহ উপরের দিকের কয়েকটা ক্লাস আমাকে দেওয়া হয়। ভাংতি বছরটা সেখানে কাটানোর পর সালমান সাহেব পুনরায় আমাকে দারুর রাশাদে ডেকে নেন। দারুর রাশাদেই পুরো সময়টা থাকি। এখনও সালমান সাহেবের সাথে আমার ব্যক্তিগত আন্তরিকতা ও হৃদ্যতা রয়েছে। আমার আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের মেম্বার তিনি। আমি দেখতে পেলাম আজকে লাইভ শুরু হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সালমান সাহেব ফোনও দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ তাঁর সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। লিয়াকত আলি সাহেব আমার একজন বড় মুরুব্বি তিনি ফোন দেন নিয়ম করে। তো এই ছিল দেশে কর্মজীবন। দারুর রাশাদ খেদমতের পাশাপাশি এ সময় দারুর রাশাদে সৌদি অ্যাম্বেসি থেকে একদল মেহমান আসেন। কথার ফাঁকে আমার সাথে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়। আমি ভালো আরবি বলতে পারতাম। একবার সৌদি অ্যাম্বেসি থেকে আমাদের দাওয়াত দেওয়া হল। আমি, মাওলানা সালমান সাহেব ও মাওলানা হাবিবুর রহমান সাহেবসহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম গিয়েছিলাম। সেখানে সবচেয়ে বেশি কথা আমিই বলেছিলাম। আমি বাচ্চা মানুষ ছিলাম তো আমি বেশি কথাই বলেছিলাম। বেশি কথা বলার কারণে আমি তাদের নজরে পড়ে যাই। তারা আমার নাম্বার নেন। এক বছর পর ওই ভদ্রলোক যারা সৌদি অ্যাম্বেসি থেকে এসেছিলেন, তারা আমাকে নক দিয়ে বললেন, তুমি সৌদিতে চলে আসো। আমি বললাম, কী জন্য? বললো, আমাদের এখানে ধর্মমন্ত্রণালয়ের আওতায় দাওয়াতের কাজে আসবে। আমি আমার উসতাজদের সঙ্গে পরামর্শ করলাম। তিনি বললেন, যাও। আমি ভাবলাম কিছু না হলেও অন্তত ফ্রি হজ-ওমরা হলেও তো হবে। যাই ঘুরে আসি। এই যাওয়ার পর দশ বছর থাকা সেখানে। আলহামদুলিল্লাহ, সেখানে প্রবাসী ভাইদের মাঝে দাওয়াতি কাজ করার চেষ্টা করেছি। দশ বছর থাকার পর আমার মনে হলো, আসলে লাক্সারিয়াস লাইফ মিট করা- এটা তো জিন্দেগি না। আমার কাজের প্রধান ক্ষেত্র তো দেশ। প্রবাসে ভাইদের মধ্যে দ্বীনের কাজ করা যায়। কিন্তু সেখানে তো অবাধে কাজ করার সুযোগ নেই। তখন সিদ্ধান্ত নিই যে, দেশে ফিরে আসবো। দেশে এসে কাজ করবো। ওখান থেকে বসেই একটা প্রতিষ্ঠান করার কথা চিন্তা করছিলাম। সেই চিন্তা আস্তে আস্তে অগ্রসর হয়। আলহামদুলিল্লাহ, ২০১৮ শুরুর দিকে আমার আসার দশ বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর বুঝলাম যে, আমার ফিরে যাওয়া উচিৎ।  যদিও আমি সারা জীবন যদি সৌদিতে সপরিবারে কাটিয়ে দিতে চাইতাম, সেই সুযোগ হয়তো আমার ছিল। কোনো বাধা ছিল না এবং এখন যে কষ্টে আছি, সে কষ্টগুলো থাকতো না। অনেক আরামে থাকতাম। কিন্তু চলে আসলাম, কারণ আমি জানি দেশে কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। বিশেষ করে ড. খোন্দকার আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীরের সঙ্গে পরামর্শ করেছিলাম; যখন দুবাইতে একটা প্রাোগ্রামে একত্রিত হই। তখন আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) আমাকে বললেন যে, ‘আমি পিএইচডি করার পর আমাকে সৌদি আরবের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অফার করা হয়েছে। আমি দেখলাম এটা কোনো জীবন না যে আমি খুব লাক্সারিয়াস জীবন নিয়ে চললাম। কিন্তু আমি এতদূর আসলাম আমার উম্মাহর জন্য অনেক কিছু করার আছে। সেজন্য আমি চলে আসলাম।’ তো আমি আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের এ কথা দ্বারা খুব অনুপ্রাণিত হলাম। মূলত তার সে কথা থেকেই আমি মানসিকভাবে সিদ্ধান্ত নিই যে, আমি দেশে ফিরে গিয়ে দাওয়াতি কাজ করবো। ইসলামের জন্য কিছু করার চেষ্টা করবো। তখন পরিবারের সঙ্গে পরামর্শ করি। আমার স্ত্রী বললেন, আবদুল্লাহ স্যার যেটা বলেছেন, সেটা নিঃসন্দেহে সঠিক ডিসিশন। বিদেশে উন্নত জীবনযাপন কোনো আলিমের লক্ষ্য হতে পারে না। এখানেও কাজ করা যায়। কিন্তু দেশে কাজের পরিধি আরো ব্যাপক। সে জায়গা থেকেই মূলত দেশে ফিরে আসা। সূত্র: ঢাকা পোস্ট

videocard
দীনি কাজে দেশভিত্তিক সীমানা থাকা উচিত না

মাওলানা শায়খ আহমাদুল্লাহ- সৌদি আরবে অবস্থানকারী একজন বাঙালি আলেম। বিশ্ববিখ্যাত একজন দাঈ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের সীমান পেরিয়ে যে কজন বাঙালি আলেমের বিশ্বময় পরিচিতি ঘটেছে, শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁদের অন্যতম। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবের পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টারের সম্মানিত দাঈ হিসেবে কর্মরত আছেন। বিখ্যাত ইসলামিক চ্যানেল পিস টিভির একজন নিয়মিত আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বিন দেলোয়ার  হুসাইন। লেখালেখি, সভা-সেমিনারে লেকচার প্রদান করা, নানামুখি দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করা, উম্মুক্ত ইসলামি প্রোগ্রাম ও ইসলামি প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করা এবং টিভি অনুষ্ঠানে সময় দেওয়াসহ বহুমুখি সেবামুলক কাজে জড়িত রয়েছেন গুণী এই আলেমেদ্বীন। কর্মব্যস্ত জীবনের ফাঁকে সুদুর প্রবাসে অবস্থান করেও প্রিয়.কমকে সময় দিয়েছেন তিনি। সৌদি আরবে বাংলাদেশিদের অবস্থান ও অবস্থা, সেখানকার ইসলাম ও মুসলিমদের নানাবিদ কথকতা এবং বিশ্বব্যাপি ইসলামের অগ্রযাত্রাসহ নানা বিষয় নিয়ে দীর্ঘ সময় কথা হয় তার সাথে। প্রযুক্তির পিঠে ভর করে গুণী এই আলেমের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রিয়.কম প্রিয় ইসলামের এডিটর ইনচার্জ মাওলানা মিরাজ রহমান  প্রিয়.কম : সৌদি আরবে আপনার র্বতমান র্কাযক্রম সম্পর্কে জানতে চাই। শায়খ আহমাদুল্লাহ : সৌদি আরবে আমি পশ্চিম দাম্মাম ইসলামি সেন্টারে বাংলা ভাষার দায়ী হিসেবে কর্মরত আছি। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ইসলামি সেবা দান করা আমার কাজ। যেমন, কোনো বিশেষ বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা, প্রশিক্ষণ, উম্মুক্ত ইসলামি প্রোগ্রাম ও ইসলামি প্রশ্নোত্তর এবং বিষয়ভিত্তিক বই-পুস্তক ও লিফলেট ইত্যাদি অনুবাদ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা। প্রিয়.কম : সেখানে প্রথমবার কী উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন? শায়খ আহমাদুল্লাহ :  সৌদিতে আমি প্রথমবার ইসলামি সেন্টারের চাকুরিতে যোগদানের জন্যেই গিয়েছি। প্রিয়.কম : আপনার লেখাপড়া কি সৌদিতেই হয়েছে, নাকি বাংলাদেশে? কোথায় কী কী পড়েছেন? শায়খ আহমাদুল্লাহ : আমি সৌদিতে লেখাপড়া করিনি। বাংলাদেশেই পড়েছি। হাতেখড়ি নিজ গ্রাম লক্ষ্মীপুরের বশিকপুর গ্রামে, এরপর প্রাথমিক পড়াশোনা হাতিয়ার ঐতিহ্যবাহী ফয়জুল উলুম মাদরাসা থেকে গ্রহণ করি। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা হাটহাজারী মাদরাসা থেকে আর যশোরের প্রাচীন দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দড়াটানা মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস শেষ করি। সবশেষে খুলনা দারুল উলুম থেকে ইফতা কোর্স কমপ্লিট করি। প্রিয়.কম : সৌদিতে এখন কী পরিমাণ বাংলাদেশি বাস করছেন এবং তাদের দীনি পরস্থিতি কেমন? শায়খ আহমাদুল্লাহ :  আশ্চর্য হলেও সত্য, সৌদি আরবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রকৃত সংখ্যা কেউই বলতে পারেন না। তবে যে কয়টি সূত্রে এ বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়, তার কোনোটিতেই ২০ লাখের কম উল্লেখ নেই। বাস্তব সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি। দুঃখের বিষয়, সৌদি আরবে দীন পালনের সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এই বিপুল সংখ্যক প্রবাসীদের বেশিরভাগ দীনি বিষয়ে অত্যন্ত উদাসীন। যেমন, আইন অনুযায়ী নামাজের সময় সকল অফিস আদালত ও দোকান-পাঠ বন্ধ থাকলেও অনেক বাংলাদেশিকে নামাজের সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আড্ডায় মশগুল থাকতে দেখা যায়। অবশ্য হারামাইনের দেশের দীনি পরিবেশ পেয়ে নিজেকে বদলানোর লোকের সংখ্যাও কম নয়। প্রিয়.কম : সৌদিতে যেসব বাংলাদেশি র্দীঘদিন বসবাস করছেন, তারা তাদরে সন্তানদের সাধারণত কোনো মাধ্যমে পড়ালেখা করান এবং এ ক্ষেত্রে তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো কী কী? শায়খ আহমাদুল্লাহ : প্রবাসীদের যারা পরিবারসহ থাকেন, তাদের সন্তানদের শিক্ষাদান একটি বিরাট সমস্যা। সৌদির সাধারণ স্কুলগুলোয় ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং নানাবিধ কারণে সন্তানদের পড়ানো সম্ভব হয় না। বাংলাদেশ অ্যাম্বাসির তত্ত্বাবধানে প্রধান প্রধান শহরগুলোতে কিছু বাংলাদেশি স্কুল রয়েছে। এসব স্কুলই প্রবাসীদের একমাত্র ভরসা। তবে এক্ষেত্রেও বেশ কিছু বিপত্তি রয়েছে। যেমন, অনেকগুলো শহরের জন্য একটি বা দুটি স্কুল থাকে; যা ছোট ছোট শহর থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন শিশুদের আসা-যাওয়া একটি কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর এসব স্কুলের বেশিরভাগ ইংলিশ মিডিয়াম বা ব্রিটিশ কারিকুলামের। সেক্ষেত্রে ছাত্ররা বাংলা ভাষায় অত্যন্ত দুর্বল থেকে যায়। তাছাড়া কোনো কারণে প্রবাসীকে দেশে ফিরে যেতে হলে সন্তানকে দেশের কারিকুলামের সাথে খাপ খাওয়ানো অসম্ভবপ্রায় হয়ে যায়। প্রিয়.কম : বাংলাদেশ থেকে যারা সেখানে পড়তে যেতে চায়, তাদের সম্ভাবনা কতটুকু এবং সমস্যাগুলো কী? শায়খ আহমাদুল্ল���হ : সৌদিতে উচ্চ শিক্ষা, বিশেষ করে দীনি বিষয়ে সুযোগ অনেক। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে-কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সংশ্লিষ্ট সৌদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেই এ সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই স্কলারশিপের ব্যবস্থা রয়েছে। অনলাইনে দরখাস্ত করতে হয়। এক্ষেত্রে সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব কিছু রিকোয়্যারমেন্ট আছে, সেগুলো পরিপূর্ণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠিত ও পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয়ে (যেমন মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও রিয়াদের আল-ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি প্রতিযোগিতা অনেক বেশি থাকায় চান্স পাওয়া একটু কঠিন। তবে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি অত্যন্ত সহজ। প্রিয়.কম : আমরা জানি, সৌদি একটি ইসলামি দেশ, সেখানে নামাজের সময় কাজর্কম বন্ধ রাখতে হয়, সঠিক মুসলিম হিসেবে গড়ে ওঠার বহু ধরনের র্কাযক্রম রয়েছে সেখানে, তারপরও একজন শ্রমিক দেশে ফিরে আসার পরে দেখা যায়, সে আগের মতোই ইবাদতে অলস, এর কারণ কী? শায়খ আহমাদুল্লাহ : এর প্রধাণ কারণ হচ্ছে, জীবনের শুরু হতে দীনি চেতনাশূন্য থাকা এবং অর্থলিপ্সা। আগে থেকেই দীনি বিষয়ে আগ্রহ না থাকায় বেশিরভাগ লোক এখানকার দীনি পরিবেশের সুবিধা ভোগের চেষ্টা করেন না। আর সৌদিতে এসে প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি নিজের আশার চেয়ে বহুগুণ বেশি উপার্জন করলেও চাহিদা কখনোই কমে না। তাছাড়া দেশে থাকা আত্মীয় স্বজনের চাহিদাও থাকে অনেক। এজন্য অনেক প্রবাসী মনে করেন, এখানে রোজগার করতে এসেছি, এর বাইরে আর কোনো কিছু গায়ে মাখাতে চাই না। দীন সম্পর্কে উদাসীন এসব প্রবাসীদের দীনি দিক্ষাদান করা আমার মতো ইসলামি সেন্টারের দায়ীগণের দায়িত্ব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলামি সেন্টারগুলো প্রবাসীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দীনি চেতনা সৃষ্টি করতে পারলেও সামগ্রিকভাবে দীনি স্রোত তৈরিতে সফল বলা যায় না। সমাজের সাধারণ ধারাকে আমরা পরিবর্তন করতে পারিনি। প্রিয়.কম : এখন সৌদি যে যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়েছে, তাতে সেখানকার আলেমদের ভূমিকা কেমন? শায়খ আহমাদুল্লাহ : সৌদি আরব একটি ইসলামি দেশ। এদেশের সংবিধান সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহ অনুসারে পরিচালিত হয়। আইন প্রণয়ন ও সকল আদালতগুলোতে এখনো বিচারকার্য পরিচালনা করেন স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরাম। আর ইসলামি সরকারের নির্দেশ মান্য করা কুরআনের নির্দেশ। তাই সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কিছু না থাকলে সরকারের সাধারণ কর্মকাণ্ডের প্রতি সমর্থন থাকে স্থানীয় ওলামায়ে কেরামের। সে হিসেবে ইয়েমেন ও সিরিয়ায় অত্যাচারী শিয়া সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের পরিচালিত যুদ্ধের প্রতি স্থানীয় ওলামাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। কারণ শিয়াদের কোনো কোনো গোষ্ঠী ইতিপূর্বে ঘোষণা দিয়েছে যে, তাদের টার্গেট হারামাইন দখল করে কারবালার মাটি ফেলে সেটাকে পবিত্র করা। সে লক্ষেই তারা ইয়েমেন দখল করেছে। তাই তাদের থামানোর কোনো বিকল্প নেই বলেই তারা মনে করেন। প্রিয়.কম : এই যুদ্ধের ফলে সেখানে বসবাসরত মানুষ, বিশেষ করে বাইরের দেশেরে শ্রমিকরা কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কি না? শায়খ আহমাদুল্লাহ : সৌদি আরবের ভেতরে দৈনন্দিন জীবন যাপনে যুদ্ধের তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই প্রবাসীরাও উল্লেখযোগ্য কোন ক্ষতির সম্মুখিন হয়নি। তবে ইয়েমেন সীমান্তবর্তী লোকদের কেউ কেউ সামান্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রবাসীদেরও দু-একজন ছিলেন। তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য। প্রিয়.কম : বাংলাদেশে আপনারা যারা সেখানে বসবাস করেন, তাদের চিন্তাধারা কী এই যুদ্ধ স¤র্পকে? শায়খ আহমাদুল্লাহ : এখানে বসবাসরত প্রবাসীরা মূলত সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব কমই ভাবে। তারা নিজেদের দেশের রাজনীতি নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকে। অবশ্য বেশিরভাগ অভিজ্ঞ প্রবাসীরা অভ্যন্তরীণ স্বার্থরক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যপারে সৌদি সরকারের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। প্রিয়.কম : সৌদি আরবে ভিনদেশি কাউকে স্থায়ীভাবে থেকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয় না, যেমনটা ইউরোপ-আমরেকিায় হচ্ছে। এর কারণ কী ? শায়খ আহমাদুল্লাহ :  এর প্রকৃত কারণ আমার জানা নেই। তবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটি কারণ থাকতে পারে। সৌদি আরব আর পশ্চিমা দেশগুলোর মাঝে অনেক পার্থক্য। পশ্চিমারা খোলামেলা। তারা ‘যা খুশি করো’ নীতিতে বিশ্বাসী। সৌদি আরবের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। তারা সব সময় সেই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার চেষ্টা করে থাকেন। ভিনদেশিরা সৌদিতে যুগ যুগ ধরে বসবাস করেন এবং অনেকটা একজন নাগরিকের মতোই বেশিরভাগ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। তবে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেলে সৌদি আরবের ঐতিহ্যগত পরিবেশ বজায় নাও থাকতে পারে। যেমন ৪ লাখ রোহিঙ্গাদের সৌদি সরকার স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন। তাদের কর্মকাণ্ড যে-কোনো প্রবাসীরাই জানেন। তাদের কিছু কিছু কাজের পরিণতি বাংলাদেশিদেরও ভোগ করতে হয়। এ কারণে হয়তো সৌদি আরব সেখানে বহিবাগতদের নাগরিকত্ব দেয় না। প্রিয়.কম : আপনার নিজের কি সেখানে থেকে যাওয়ার ইচ্ছে হয় না ? নাকি বাংলাদশে থাকাটাই আপনি ভালো মনে করেন, কেনো ? শায়খ আহমাদুল্লাহ : সৌদি আরবের মতো নিরাপদ দ্বিতীয় কোনো দেশ বিশ্বে নেই। তাই যে-কোনো শান্তিকামী মানুষই সৌদিতে থেকে যেতে চাইবেন। তবে মাতৃভূমির প্রতি সহজাত টান কার না থাকে? সে কারণে বাংলাদেশে থাকার বাসনা কি আর মিটে যায়! প্রিয়.কম : সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় র্কাযক্রমে বাংলাদেশিদের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে কি না? শায়খ আহমাদুল্লাহ : না। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে বাংলাদেশীদের কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ সাধারণভাবে নেই। তবে সৌদি সরকার চাইলে যে-কোনো কাজে বাংলাদেশিদের নিযোগ করতে পারেন। প্রিয়.কম : আপনারা যারা সেখানে থাকেন তাদের প্রতি আরবদের দৃষ্টিভঙ্গী কেমন? শায়খ আহমাদুল্লাহ : সব জাতির মধ্যেই ভালোমন্দ থাকে। আরবদের বেলায়ও তাই। ভালো লোকেরা ভিনদেশি শ্রমিকদের তুচ্ছতার নজরে দেখেন না। বরং মানুষকে তার কাজের মাধ্যমে মূল্যায়ন করেন। অবশ্য ভিনদেশিদের প্রতি কিছুটা ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি লালন করা আরবের সংখ্যাও কম নয়। তবে মজার বিষয় হলো, এরপরও বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিশ্বের যে-কোনো দেশ থেকে সৌদি আরবে বসবাস ও চাকুরিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। কারণ একটাই, যোগফল এখানে ভালো। প্রিয়.কম : আপনার নিজের জীবন স¤র্পকে কিছু বলুন। যেমন, আপনার বেড়ে ওঠা, স্মৃতি, প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তি... শায়খ আহমাদুল্লাহ :  আমি অত্যন্ত সাধারণ একটি আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করি। গর্বের বিষয়, দেশের প্রচলিত কওমি মাদরাসায় লেখাপড়ার সৌভাগ্য অর্জন করি। ছাত্র জীবনে প্রথম দিক থেকেই ভালো শিক্ষকদের সন্নিধান লাভে ধন্য হই। সেজন্য ছাত্র জীবনে বেশিরভাগ ক্লাসে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থান অধিকারের সুযোগ লাভ করি। কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক)-এর অধীনে ৩টি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করি। উচ্চ মাধ্যমিকে ১০ম, ফজিলতে ৩য়  এবং তাকমিলে (২০০১/২) সম্মিলিত মেধা তালিকায় ২য় স্থান অধিকারের তওফিক হয়। ফালিল্লাহিল হামদ। সব শেষে ইফতা শেষ করি খুলনা দারুল উলুম থেকে। কর্ম জীবন শুরু করি রাজধানী ঢাকার দারুর রাশাদ মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে। পাশাপাশি মিরপুর ১০নং-এর কবরস্থান মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরে মনিপুর বাইতুল ফালাহে ইমাম ও খতিব হিসেবে অনেক দিক দায়িত্ব পালন করি। মাঝে এক বছর ঢাকার আরজাবাদ মাদরাসায় শিক্ষকতা করি। এরপর থেকে সৌদি আরবে ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত ইসলামি গাইডেন্স অফিসের পশ্চিম দাম্মাম শাখায় বাংলা বিভাগে দায়ী হিসেবে কাজ করছি। জীবনের বেশিরভাগ অংশেই আল্লাহর অনেক নেয়ামত প্রাপ্তির তওফিক হয়েছে। যার বেশিরভাগের যোগ্য আমি নিজেকে মনে করি না। কোনো কোনো চাওয়া তো অপূর্ণ থেকেছে-ই। কিন্তু তা পরিমাণে খুবই কম। যেসব স্মৃতি সবচে’ বেশি নাড়া দেয়-তার অন্যতম হলো ছাত্র জীবনে কোনো কোনো শিক্ষকের ইখলাস, তাকওয়াত এবং সততা ও দুনিয়া বিমুখতার বাস্তব নজির নিজের চোখে দেখেছি এবং কাছে থেকে উপলব্ধি করেছি। সত্যিই এখনো মাদরাসাগুলোর চৌহদ্দিতে এমন কিছু লোক বাস করেন যাদের ব্যক্তিত্বের উচ্চতা স¤পর্কে সমাজের মানুষের কোনো ধারণাই নেই। তাদের খুব মিস করি। প্রিয়.কম : বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমস্যা ও প্রয়োজনীয় সংস্কার স¤র্পকে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাচ্ছি... । শায়খ আহমাদুল্লাহ : এ বিষয়ে আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের মন্তব্য খুব বেশি মানায় না। তবু এটুকু বলবো, বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থা নানা কারণে অনন্য। বিশেষ করে হিফজুল কুরআনের দিক থেকে বাংলাদেশের মাদরাসাগুলোর অবদান বিশ্বের অনেক দেশ থেকে বেশি। অনুরূপ মাদরাসা শিক্ষার্থীদের তরবিয়াতও গর্ব করার মতো। শিক্ষা কারিকুলামে যুগোপযোগী বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি সময়ের দাবি। শিক্ষাদান পদ্ধতিতে প্রাচীন ধারার বদলে যুগোপযোগী ধারা সংযুক্ত হলে আরো বেশি উপকারী হবে বলে মনে হয়। প্রিয়.কম : আপনি একটি আরব দেশ গিয়ে কেনো দীনি কাজ করছেনে? আপনার কি মনে হয় না, সেখানকার তুলনায় এখানে দীনের প্রয়োজনীয়তা অনেকে বেশি? যেহেতু সেখানের ইসলামি পরিস্থিতি আমাদের দেশের থেকে অনেক ভালো বলেই আমরা মনে করি ? শায়খ আহমাদুল্লাহ : এটা বিশ্বায়নের যুগ। আপনি কোন দেশে বসে কাজ করছেন এটা মুখ্য বিষয় নয়। কাজের সুবিধা থাকাটাই মুখ্য। তাছাড়া সৌদি আরবের দুই মিলিয়নেরও বেশি বাংলাদেশি বসবাস করেন। তাদের দীনি চাহিদা মেটানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের কাজের ক্ষেত্র মূলত বাংলাদেশিরাই। সুতরাং দেশে যাদের মাঝে কাজ করতাম প্রবাসেও তাদের মাঝেই কাজ করছি। বরং দেশের তুলনায় এখানে প্রয়োজনটা কোনো কোনো দিক থেকে আমার মনে হয় বেশি। কারণ এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যার তুলনায় আনুপাতিক হারে আলেমদের সংখ্যা কম। আমি মনে করি, দীনি কাজ করার ক্ষেত্রে দেশগত ও জাতিগত কোনো সীমানা থাকা উচিত না। প্রিয়.কম : ভবিষ্যতে দেশের জন্যে কিংবা বিশ্বের জন্যে কী করার পরকিল্পনা রয়ছে আপনার ? শায়খ আহমাদুল্লাহ :  কুরআন ও সুন্নাহর আলো সুন্দর উপায়ে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সত্যমিথ্যার চক্রে বিভ্রান্ত হওয়া থেকে মানবতাকে মুক্ত করার জন্য সত্য, সুন্দর ও শক্তিমান যুগোপযোগী মিডিয়ার বিশাল জগত গড়ে উঠবে- এটা আমার স্বপ্ন। প্রিয়.কম : আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধ-কেন্দ্রিক ইসলামপন্থীদের জড়িয়ে যে একটা সমস্যা রয়েছে, এ স¤র্পকে আপনার চিন্তাধারা কি ? আপনি যেহেতু র্দীঘদিন সৌদিতে আছেন, সেখোনকার আরবদের এ স¤র্পকীয় কোনো দৃষ্টিভঙ্গীর কথা আপনার জানা আছে কি না.. শায়খ আহমাদুল্লাহ :  বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকে ইসলাম ও আলেম সমাজের বিপক্ষে দাঁড় করানোর অপচেষ্টা বহুদিনের। এটি ইসলাম বিদ্বেষী মহলের চক্রান্তমাত্র। সৌদি ওলামা ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ বাংলাদেশের অস্তিত্বকে যেমন সম্মানের সঙ্গে স্বীকার করেন, তেমনি বাংলাদেশের আলেমদের প্রতিও তাদের রয়েছে অগাধ শ্রদ্ধা। এর কোনো একটিকেই তারা খাটো কিংবা সাংঘর্ষিক মনে করেন না। প্রিয়.কম : বাংলাদেশ যারা ইসলামি নানা এক্টিভিটির সঙ্গে জড়িত, নানা দলে বিভক্ত আলেম সমাজ, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার কিছু বলার আছে কি না ? শায়খ আহমাদুল্লাহ :  নিজের লক্ষ্য বাস্তবায়নের স্বার্থেই ঐক্য এবং পরমত সহিষ্ণুতার ব্যপারে সচেষ্ট থাকা দরকার। অন্যের ব্যাপারে চিন্তার চেয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করা উচিত বেশি। সাময়িক আবেগের চেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার কথা মাথায় রাখা ভালো বলে মনে হয়। প্রিয়.কম : আমাদের এতক্ষণ সময় দিয়েছেন বলে আপনাকে ধন্যবাদ। শায়খ আহমাদুল্লাহ :  আপনাকেও ধন্যবাদ।[সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ২৯ জুন ২০১৬ তারিখে।)সূত্র: প্রিয়.কম

videocard
তরুণদেরকে নৈতিকতায় বলীয়ান হতে হবে : আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ

২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

মুসলিম তরুণদেরকে নীতি-নৈতিকতায় বলীয়ান হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত ইসলামিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। সেমিনারে তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে তরুণদের কুরআনকে নির্মোহভাবে পাঠ করা এবং প্রিয়নবী (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন করা একান্ত জরুরি। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, প্রত্যেক মুসলমানের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের ইবাদত করা। মুসলিম হিসেবে ঈমানের ওপর টিকে থাকার জন্য সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস রাখতে হবে। তারুণ্যের সময়টাকে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়া যাবে না। কারণ মুমিনের প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান। প্রতিটা সেকেন্ডকে হিসাব করে খরচ করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তকে সৃজনশীল কাজে ব্যয় করতে হবে। শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলাম আমাদেরকে ত্যাগের শিক্ষা দেয় আর বর্তমান পশ্চিমা সভ্যতা আমদেরকে ভোগের শিক্ষা দেয়। মুসলিম হিসেবে আমাদেরকে ভোগের পথ অবলম্বন না করে ত্যাগের দীক্ষায় দীক্ষিত হতে হবে। শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ইসলাম জ্ঞানের ধর্ম। কুরআন কারীমের প্রথম নির্দেশই হলো পড়ো। কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ জ্ঞানার্জনের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। অথচ আমরা অধিকাংশই ইসলাম সম্পর্কে পারিবারিকভাবে দেখে এবং শুনে শুনে পালন করছি। আমাদের উচিত অধ্যয়ন করা, ইসলাম সম্পর্কে পড়ে প্রত্যক্ষভাবে জানা, উপলব্ধি করা এবং আন্তরিকভাবে ধারণ করা। অন্তত কুরআনকে জীবনে একবার হলেও অনুবাদসহ পাঠ করা, একটা হাদীসগ্রন্থ অধ্যয়ন করা এবং রাষূল (সা.)-এর একটা জীবনীগ্রন্থ পড়া আমাদের সবার কর্তব্য। এটুকু মুসলমানিত্বের দাবি। কুরআন এবং সীরাত জীবন্ত মুজিযা। এগুলো মানুষকে সত্যে পথে দিশা দেয়, সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করে। ইসলামের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ সেমিনারে আরো বলেন, ইসলামের সুন্দর দিকগুলোর মধ্য হতে অন্যতম একটি হলো উত্তম আচরণ। অথচ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও আমাদের মধ্যে সদাচারের যথাযথ চর্চা নেই। ভোগ-বিলাস ও অপরকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমরা লিপ্ত। আমাদের মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা চল্লিশ বছর আগের পরিবেশের সাথে তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে যাবে। অথচ আমাদের নবী (সা.) তাঁর জীবনাচারের মধ্য দিয়ে উত্তম আচরণের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। তিনি অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গেও সদাচার করতেন। পক্ষান্তরে আমরা আমাদের মুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গেও উত্তম আচরণ করতে পারছি না। এমনকি আমরা আমাদের আমাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচার করতে অভ্যস্ত নই। তিনি বলেন, প্রিয় নবীর উম্মত হিসেবে আমাদের আচরণ সুন্দর করতে হবে। সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মুহাম্মদ ফাজলী ইলাহী, ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমানসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টির শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা শেষে শায়খ আহমাদুল্লাহ ছাত্র-শিক্ষকদের প্রশ্নের উত্তর দেন।

videocard
শুদ্ধ ও সুন্দর ভাষায় কথা বলা সুন্নাহ

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

বিশুদ্ধ, সুন্দর ও মার্জিত ভাষায় সবাইকে কথা বলতে উৎসাহিত করেছেন বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব শায়খ আহমাদুল্লাহ। মাতৃভাষা দিবসে তিনি বাংলা ভাষাভাষীদের এই আহ্বান জানান। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) নিজের ফেরিফাইড ফেসবুক পেজে তিনি আরও উল্লেখ করেন—রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশুদ্ধ ও মার্জিত ভাষায় কথা বলতেন। শুদ্ধ সুন্দর ভাষায় কথা বলা সুন্নাহ। ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের সম্মানে বাংলা ভাষাভাষী সবাইকে প্রমিত বাংলা চর্চা ও বিদেশি ভাষার ব্যবহার এবং বাংলা-ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেন প্রখ্যাত এই ইসলামিক স্কলার। তিনি বলেন, ‘তাঁদের অর্জনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আসুন সবাই সর্বত্র নিঃসংকোচে প্রমিত বাংলা চর্চা করি। অপ্রয়োজনে বিদেশি ভাষার ব্যবহার ও বাংলিশ বর্জন করি।’ মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করে তিনি বলেন, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন- সেই আবদুস সালাম, আবদুল জাব্বার, রফিকুল ইসলাম ও বরকতুল্লাহকে মহান আল্লাহ আমাদের পক্ষ হতে উত্তম বিনিময় দান করুন।  শায়খ আহমাদুল্লাহ স্বনামধন্য ইসলামি ব্যক্তিত্ব। বিদগ্ধ আলোচক, লেখক ও খতিব। ইসলামের খেদমতে তিনি নানামুখী কাজ করেন। লেখালেখি, গবেষণা ও সভা-সেমিনারে লেকচারসহ নানামুখী দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেন। উন্মুক্ত ইসলামিক প্রোগ্রাম ও প্রশ্নোত্তরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং বহুমুখী সেবামূলক কাজে সপ্রতিভ গুণী ও স্বনামধন্য এই আলেমে দ্বীন। আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন তারই প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সেবা ও দাওয়াহ প্রতিষ্ঠান। শায়খ আহমাদুল্লাহ দাওয়াহ ও গবেষণা বিষয়ে প্রায় শ’খানেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তার লেখা প্রকাশিত হয়। আরবি ভাষাতেও প্রকাশিত হয়েছে তার অনেক প্রবন্ধ। জাপান, ভারত, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের একাধিক আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।   সূত্র: ঢাকা মেইল ঢাকা পোস্ট

  • « Previous
  • 1