
মে দিবসের ভাবনা : ইসলামে শ্রমিকের অধিকার ও মর্যাদা
৯ এপ্রিল, ২০২২, রাত ১২:০০
শায়খ আহমাদুল্লাহ
১লা মে আর্ন্তাজাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস। এই দিবস উপলক্ষে পৃথিবীর প্রায় ৮০টি দেশে সরকারি ছুটির ব্যবস্থা থাকে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং শ্রমিক সংগঠন এই দিবসে শ্রমিকদের বিভিন্ন অধিকার নিয়ে কথা বলে। নানা আয়োজনে এই দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে।
আজ আমরা আলোচনা করব কুরআন এবং সুন্নাহ তথা ইসলাম শ্রমিককে কী মর্যাদা ও অধিকার দেয় সে বিষয়ে। আজকের মানবাধিকার সংস্থা এবং শ্রমিক সংগঠনগুলোর জন্মেরও শত শত বছর আগে কুরআন এবং সুন্নাহ তথা ইসলাম শ্রমিকদের যে-সকল মর্যাদা এবং অধিকারের কথা বলেছে, তা আমরা বেশির ভাগ মানুষই জানি না। এ বিষয়ে কুরআন এবং সুন্নাহর বক্তব্য জানার পরে আমাদের কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়ে যাবে যে, মুসলিমকে মানবিক হওয়ার জন্য, মানবাধিকার শেখার জন্য, প্রকৃত মানুষ হওয়ার জন্য কোনো মানবাধিকার সংস্থা বা সংগঠনের দ্বারস্থ হওয়ার আদৌ প্রয়োজন নেই। বরং এই বিষয়ে কুরআনুল কারীমে রয়েছে সুস্পষ্ট ও বিশদ নীতিমালা এবং গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে কিছু মানুষকে মালিক আর কিছু মানুষকে শ্রমিক করে বানিয়েছেন। কেন তিনি এই তারতম্য রেখেছেন, তাঁর এই তারতম্যের পেছনে প্রজ্ঞাপূর্ণ যুক্তির কথা তিনি আলোচনা করেছেন সূরা যুখরুফের একটি আয়াতে। তিনি ইরশাদ করেছেন,
حْنُ قَسَمْنَا بَيْنَهُم مَّعِيشَتَهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَرَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَتَّخِذَ بَعْضُهُم بَعْضًا سُخْرِيًّا وَرَحْمَتُ رَبِّكَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
‘আমিই তাদের পার্থিব জীবনে জীবিকা বণ্টন করি এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যাতে একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। তারা যা সঞ্চয় করে তার চেয়ে তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ উত্তম।’ (সূরা যুখরুফ: আয়াত ৩২)
অর্থাৎ জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা কিছু মানুষকে মালিক বা উপরে রেখেছেন আর কিছু মানুষকে তাদের অধীন বা শ্রমিক করে রেখেছেন। আর এটা এজন্য যে, যদি এটা না হতো তাহলে পৃথিবীর বর্তমান যে ধারা আমরা দেখতে পাচ্ছি, যে স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিকতা আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটি থাকত না; এটি ব্যহত হতো। অতএব আল্লাহ তায়ালা সকল প্রজ্ঞাবানদের সেরা এবং শ্রেষ্ঠ। তিনি আহকামুল হাকিমীন। তাঁর প্রতিটি বণ্টনের পেছনে রয়েছে অনেক প্রজ্ঞাপূর্ণ যুক্তি এবং ব্যাখ্যা।
তবে এই ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রণিধানযোগ্য। ১. আল্লাহ তায়ালার কাছে মানুষের সম্মানিত হওয়া নির্ভর করে ব্যক্তির আমলের ওপর, কর্মের ওপর। মানুষ যখন সৎকর্মশীল হন, নেককার হন, ভালো মানুষ হন, অসৎ এবং মন্দ কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন— তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ এবং সবচেয়ে মর্যাদাবান হিসেবে বিবেচিত হন। এক্ষেত্রে তার পেশা মোটেও বিবেচ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّـهِ أَتْقَاكُمْ
‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে মুত্তাকীগণ সবচেয়ে সম্মানিত।’ (সূরা হুজরাত: আয়াত ১৩)
অতএব বোঝা গেল, আল্লাহ তায়ালা কাউকে শ্রমিক এবং কাউকে মালিক করে রাখলেও এটা অত্যন্ত সাময়িক সময়ের জন্য। আল্লাহ তায়ালার কাছে কিয়ামতের দিন মার্যাদার আসনে আসীন হবেন সেই ব্যক্তি, যার কর্ম দুনিয়ায় সবচেয়ে ভালো থাকবে এবং যিনি সৎকর্মশীল এবং নেককার বান্দা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীর স্বাভাবিক ধারাকে অব্যাহত রাখার স্বার্থে কিছু মানুষকে শ্রমিক করে রাখলেও ইসলাম সুস্পষ্টভাবে তাদের অধিকার এবং মর্যাদার কথা আলোকপাত করেছে। এছাড়া শ্রমিক তার মালিকের অধীন হলেও আল্লাহ তায়ালা কোনো কোনো দিক দিয়ে তাকে তার মালিক থেকেও ধনী, সমৃদ্ধ, সম্মানিত ও সুখী করে রেখেছেন; যা অনেক সময় আমরা আঁচও করি না বা টেরও পাই না। এই পৃথিবীতে জীবিকা নির্বাহের যত ব্যবস্থা রয়েছে, যত উপায় রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে উত্তম জীবিকা হলো শ্রমিকের জীবিকা। এ-বিষয়ে সহীহ বুখারীর একটি হাদীসে নবী (সা.) বলেছেন,
مَا أَكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ، خَيْرًا مِنْ أَنْ يَأْكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
‘সে ব্যক্তির চেয়ে উত্তম খাবার কেউ খেতে পারল না, যে ব্যক্তি নিজ হাতে উপার্জন করে খেয়েছে।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস নম্বর ২০৭২)
নবী (সা.) আরো বলেছেন,
وَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، كَانَ يَأْكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
‘আল্লাহার নবী দাঊদ (আ.) নিজের হাতে উপার্জন করে আহার যোগাতেন।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস নম্বর ২০৭২)
দাঊদ (আ.) ছিলেন তার যুগে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে আসীন। একজন রাষ্ট্রপ্রধান হয়েও তিনি লৌহশিল্পের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সহীহ মুসলীমের এক হাদীসে এসেছে, যাকারিয়া (আ.) ছিলেন কাঠমিস্ত্রী। এছাড়া অধিকাংশ নবী-রাসূলই ছাগল বা বিভিন্ন গাবদি পশুর রাখাল ছিলেন। এর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মর্যাদাবান, সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হলেন আম্বিয়া (আ.)। সেই নবী-রাসূলগণকে আল্লাহ তায়ালা শ্রমিকদের কাতারে রেখেছেন। সকল নাবী-রাসূলই কোনো না কোনো ক্যাটাগরির শ্রমজীবী ছিলেন। এ থেকে ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা অত্যন্ত পরিস্কারভাবে ফুটে ওঠে। শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ইসলাম শ্রমিকের অধিকার সম্পর্কে যেসব নির্দেশনা দেয় তা হলো—
পারিশ্রমিক: শ্রমিকের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার পারিশ্রমিক। কুরআন কারীমের একশত পঞ্চাশ জায়গায় আল্লাহ তায়ালা পারিশ্রমিকের কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ একজন শ্রমিকের পারিশ্রমিকের বিষয়টিকে কুরআনুল কারীমে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, একশত পঞ্চশ জায়গায় উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এক আয়াতে বলেন,
وَلا تَبخَسُوا النّاسَ أَشياءَهُم
‘তোমরা মানুষকে কোনো কিছুতে ঠকাবে না।’ (সূরা হূদ: আয়াত ৮৫)
শ্রমিকের চেয়ে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে শক্তিশালী করে রেখেছেন, এই কারণে আপনি কোনো অবস্থায় তাকে ঠকাতে পারেন না। এটাই ইসলামের শিক্ষা এবং নির্দেশ। সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে, নবী (আ.) হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘আমি কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্বয়ং বাদীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হব। আল্লাহর মামলা হবে তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তাদের একজন হলো, যে ব্যক্তি অধীনস্থ শ্রমিককে পারিশ্রমিক দেন নি। কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং নিজে এই জালেম ব্যক্তির বিরুদ্ধে বাদীর ভূমিকায় থাকবেন। সুনান ইবনে মাজাহর এক হাদীসে এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন,
أَعْطِ الْأَجِيرَ أَجْرَهُ قَبْلَ أَنْ يَجِفَّ عَرَقُهُ
‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগে তার পারিশ্রমিক দাও।’ (সুনান বাইহাকী: হাদীস নম্বর ২১৫৮)
এ থেকে একেবারে পরিস্কারভাবে ফুটে উঠল যে, ইসলাম শ্রমিকের পারিশ্রমিকের বিষয়ে কোনো প্রকার ছাড় দেয় নি। বরং এটাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে রেখেছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কাজের বুয়া থেকে নিয়ে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষকে আমরা বিভিন্ন সময় নিয়োগ দিয়ে থাকি। এ সমস্ত লোকদের পারিশ্রমিক পরিশোধের ক্ষেত্রে কুরাআন এবং সুন্নাহর এই নীতিমালাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মাথায় রাখা মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য।
সাধ্যাতীত কাজ চাপিয়ে না দেয়া: শ্রমিকের অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম দ্বিতীয় যে নির্দেশনা দান করে তা হলো, শ্রমিকের ওপর কোনোভাবেই সাধ্যাতীত কাজ চাপিয়ে না দেয়া হয়। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা করেছেন। আল্লাহর নবী শুয়াইব (আ.) যখন মূসা (আ.)-কে রাখাল হিসেবে নিয়োগ দিলেন, তখন তিনি একটি উক্তি করেছিলেন। উক্তিটি আল্লাহ তায়ালার কাছে পছন্দ হয়েছে বিধায় এটিকে আল্লাহ তায়ালা কুরআন কারীমের অংশ করে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, শুয়াইব (আ.) মূসা (আ.)-কে বলেছিলেন,
وَمَا أُرِيدُ أَنْ أَشُقَّ عَلَيْكَ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللَّـهُ مِنَ الصَّالِحِينَ
‘আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। তুমি আমাকে সৎকর্মী পাবে ইন-শা-আল্লাহ।’ (সূরা কাসাস: আয়াত ২৭)
আজ আমাদের অধীনস্থ শ্রমিকদের কষ্টের ব্যাপারটা খেয়াল করি না। আমরা তাদের ওপর সাধ্যাতীত কাজ চাপিয়ে দিই। অথচ মুসলিম হিসেবে আমাদের তা করা উচিত নয়। এটি আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে। এটি কুরআনে কারীমের শিক্ষা।
সম্মান ও মর্যাদা: ইসলাম শ্রমিকের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। শ্রমিককে ইসলাম যে মর্যাদা দিয়েছে, সেই মর্যাদার কথা তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা, শ্রমিক সংগঠন বা পৃথিবীর কোনো সমাজ ও সভ্যতা কল্পনাও করতে পারে না। সুনান ইবনে মাজাহর এক হাদীসে এসেছে, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কারো কাজের লোক যদি খাবার নিয়ে আসে, তাহলে অবশ্যই সে যেন কাজের লোককে নিজের সঙ্গে খেতে বসায় একই প্লেটে, একই দস্তরখানায়, একই টেবিলে তার সঙ্গে একই মানের খাদ্য খাওয়ার জন্য তাকে যেন আহ্বান করা হয়। যদি চাকর বা অধীনস্থ লোক অস্বীকৃতি জানান, তিনি যদি বিব্রত বোধ করেন, তাহলে তাকে ধরে নিয়ে নিজের সঙ্গে বসিয়ে খাবার খাওয়ানোর নির্দেশনা ইসলাম আমাদেরকে দিয়েছে। পৃথিবীর কোনো সভ্যতা, পৃথিবীর কোনো সমাজ, পৃথিবীর কোনো সংগঠন শ্রমিকের জন্য এরকম অধিকার চাওয়ার সাহস কখনো করেছে, শ্রমিককে তার মালিকের সমমানের খাবার একসঙ্গে বসিয়ে খাওয়াতে হবে? এই শিক্ষা ইসলাম দিয়েছে। এই দীক্ষা আমাদেরকে ইসলাম দিয়েছে। আমাদের সমাজে সভ্যতার মুখোশধারী তথাকথিত শিক্ষিতদের বহু লোককে আমার নিজের চোখে দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে যে, তারা প্রচণ্ড ঠান্ডার দিনে সোফায় বসে হয়ত কোনো প্রোগ্রাম উপভোগ করছেন বা আড্ডা দিচ্ছেন অথচ ছোট কাজের মেয়েটাকে ঠান্ডার দিনে ফ্লোরে বসিয়ে রেখেছেন, সোফায় বা কোনো চেয়ারে তাকে বসতে দিচ্ছেন না। এর নির্মমতা ও অবিচার আমাদের সমাজে এখনও হয়। শ্রমিকের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া, তার স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল করা মালিকের কর্তব্য। যদি তিনি তা না করেন, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে এর জন্য কড়ায়-গণ্ডায় আল্লাহ তায়ালার কাছে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
ন্যায়ানুগ আচরণ: জুলুমকে ইসলাম সর্বোচ্চ মাত্রার নিষিদ্ধ এবং হারাম কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছে। নবী (আ.) বলেছেন,
الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
‘জুলুম কিয়ামতের দিন অন্ধকার হয়ে দেখে দেবে।’ (সহীহ বুখারী: হাদীস নম্বর ২৪৪৭; সহীহ মুসলিম: হাদীস নম্বর ২৫৭৮)
দুনিয়াতে কারো প্রতি যদি অবিচার করা হয়—আর্থিক, শারীরিক, কথা ও সাধ্যাতীত কাজ চাপিয়ে বা যেভাবেই হোক—কিয়ামতের ময়দানে বহুমুখী অন্ধকার হয়ে অবির্ভূত হবে। নবী (আ.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা হাদীসে কুদসীতে ইরশাদ করেছেন,
يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي، وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا، فَلَا تَظَالَمُوا
‘হে আমার বান্দাগণ! আমি নিজের জন্য জুলুম হারাম করেছি এবং তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও জুলুম হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা পরস্পরে জুলুম করবে না।’ (সহীহ মুসলিম: হাদীস নম্বর ২৫৭৭)
সহীহ বুখারীর এক হাদীসে এসেছে, নবী (আ.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা অনেকসময় মানুষকে অবকাশ দিয়ে থাকেন, মানুষকে সুযোগ দিয়ে থাকেন, অন্যের প্রতি জুলুম করার শক্তি-সামর্থ দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা পাকড়াও করেন না। সে জুলুম করতেই থাকে, করতেই থাকে, করতেই থাকে। কিন্তু এক সময় আল্লাহ তায়ালা তাকে পাকড়াও করেন। তখন তার আর পালাবার কোনো পথ থাকে না।
শ্রমজীবী মানুষের প্রতি জুলুম এবং অবিচার প্রসঙ্গে নবী (আ.)-এর জীবনের ঐতিহাসিক একটি ঘটনা আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্তরূপে রয়েছে। সাহাবী আবু মাসঊদ রা. বর্ণনা করেছেন,
كُنْتُ أَضْرِبُ غُلَامًا لِي، فَسَمِعْتُ مِنْ خَلْفِي صَوْتًا: «اعْلَمْ، أَبَا مَسْعُودٍ، لَلَّهُ أَقْدَرُ عَلَيْكَ مِنْكَ عَلَيْهِ»، فَالْتَفَتُّ فَإِذَا هُوَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، هُوَ حُرٌّ لِوَجْهِ اللهِ
“একবার আমি আমার এক ক্রীতদাসকে প্রহার করছিলাম। তখন পেছন থেকে শুনতে পেলাম, ‘আবু মাসঊদ! জেনে রেখো, তার ওপর তোমার যতটুকু ক্ষমতা রয়েছে, আল্লাহর ক্ষমতা এরচেয়ে তোমার ওপর বেশি রয়েছে।’ আমি পেছনে তাকিয়ে দেখলাম, তিনি রাসূল (সা.)। তখন আমি বললাম, আল্লাহর জন্য তাকে আমি স্বাধীন করে দিলাম।”
এ হলো ইসলামের নবী, আমাদের রাসূল কারীম (সা.)-এর মহানুভবতা। এ ছিল শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায় করার ক্ষেত্রে, অধিকার সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রে, জুলুমের হাত থেকে শ্রমজীবী মানুষকে বাঁচাবার ক্ষেত্রে তার বলিষ্ঠ ভূমিকার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে অধীনস্থদের প্রতি আমাদের সদয় হতে হবে। তাদের অধিকারগুলোকে সংরক্ষণ করতে হবে, তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার ব্যাপারে আমাদেরকে দৃঢ প্রতিজ্ঞা আমাদেরকে করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা সব ধরনের অবিচার থেকে আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন।