
ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার আমল
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, রাত ১২:০০
শায়খ আহমাদুল্লাহ
শায়খ আহমাদুল্লাহ
তাকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস করা ঈমানের অন্যতম রোকন। ভাগ্যের ওপর ঈমান আনা ছাড়া মুমিন হওয়া যায় না। ভাগ্যের ওপর ঈমান আনার অর্থ হলো এ বিশ্বাস রাখা যে, পৃথিবীতে ভালোমন্দ যা কিছু ঘটে, সব মহান আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ী ঘটে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّا كُلَّ شَىۡءٍ خَلَقۡنٰهُ بِقَدَرٍ ۞
অর্থ : আমি প্রতিটি জিনিস সৃষ্টি করেছি নির্ধারিতভাবে। [সুরা কামার : ৪৯]
আল্লাহ তাআলা মানুষের ভাগ্য বিভিন্ন ধাপে নির্ধারণ করেন। একটি নির্ধারণ হয়েছে আসমান ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে। [সহীহ মুসলিম, ২৬৫৩] আরেকটা নির্ধারণ হয়েছে মানুষ আদম আ.-এর পৃষ্ঠদেশে থাকাকালে। [সুনান তিরমিযী, ৩০৭৫] আরেকটা নির্ধারণ হয় মাতৃগর্ভে। [সহীহ মুসলিম, ২৬৪৬] আরেকটা নির্ধারণ হয় প্রতি বছরে একবার।
অনেকেই মনে করেন, প্রতি বছর একবার যে ভাগ্য নির্ধারণ হয়, তা শবে বরাতে হয়ে থাকে। এ মতের পক্ষে অনেক ইমামের মত থাকলেও মতটি প্রমাণসমৃদ্ধ নয়। বিশুদ্ধ মতানুসারে এ ভাগ্য নির্ধারণ লাইলাতুল কদরে হয়ে থাকে। এ মতটি কুরআন-সমর্থিত। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ اِنَّا کُنَّا مُنۡذِرِیۡنَ ﴿۳﴾ فِیۡهَا یُفۡرَقُ کُلُّ اَمۡرٍ حَکِیۡمٍ ۙ﴿۴﴾
অর্থ : আমি কুরআন নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। আর আমি মানুষকে সতর্ক করার ছিলাম। এ রাতেই প্রতিটি প্রজ্ঞাজনোচিত বিষয় স্থির হয়। [সূরা দুখান : ৩-৪]
এ আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয়, ভাগ্য নির্ধারণ সে রাতে হয়ে থাকে, যে রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে। আর কুরআন নাজিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِیۡ لَیۡلَۃِ الۡقَدۡرِ ۚ﴿ۖ۱﴾
অর্থ : নিশ্চয়ই আমি কুরআন লাইলাতুল কদরে নাজিল করেছি। [সূরা ক্বদর : ০১]
সুতরাং বোঝা গেল, ভাগ্য নির্ধারণ লাইলাতুল কদরে হয়ে থাকে।
আমাদের দেশে শবে বরাতে মসজিদে অনেক ভিড় হয়ে থাকে। এর অন্যতম একটা কারণ হলো মানুষ মনে করে এটা ভাগ্য নির্ধারণের রাত। এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়া করলে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হবে এবং সারা বছর ভালো থাকা যাবে।
কিন্তু আমাদের দেশের মানুষ ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে থাকে, তা যথাযথ নয়। আমরা কুরআন-সুন্নাহর আলোকে এমন কিছু আমল তুলে ধরছি, যা ভাগ্য সুপ্রসন্ন করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে—
- সারাবছর ঈমান ও তাকওয়ার চর্চা করা। অর্থাৎ সারা বছর নিজের ঈমানের পরিচর্যা করা এবং আল্লাহর যাবতীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা।
- বেশি বেশি ইস্তিগফার করা। বিশেষত, যখন কোনো বিপদ আসে কিংবা কোনো সংকট তৈরি হয় অথবা আল্লাহর কাছ থেকে কোনো চাওয়া পূরণ করানোর বিষয় আসে, তখন আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করতে হবে। সুরা নূহে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ؕ اِنَّهٗ کَانَ غَفَّارًا ﴿ۙ۱۰﴾ یُّرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا ﴿ۙ۱۱﴾ وَّ یُمۡدِدۡکُمۡ بِاَمۡوَالٍ وَّ بَنِیۡنَ وَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ جَنّٰتٍ وَّ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ اَنۡهٰرًا ﴿ؕ۱۲﴾
তোমরা নিজ পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করবেন উদ্যানরাজি ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। [সুরা নূহ : ১০-১২]
৩. রিযা বিল কাযা বা আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ যখন যে অবস্থায় রাখেন এবং যা কিছু দান করেন, তাতেই সন্তুষ্ট থাকা। আল্লাহর কাছে কোনো জিনিস চেয়ে প্রত্যাশামতো না পেলেও এই ভেবে শুকরিয়া আদায় করা যে, আল্লাহ আমাকে যা দান করেছেন, তাই আমার জন্য কল্যাণকর। আর শুকরিয়া আদায় করলে আল্লাহ নেয়ামত বৃদ্ধি করে দেন। তিনি বলেন,
لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ.
যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি তোমাদেরকে আরও বেশি দান করব। [সুরা ইবরাহিম : ৭]
৪. সাদাকা করা। দান-সাদাকার বদৌলতে বিপদ-আপদ দূর হয় এবং জীবনে সমৃদ্ধি লাভ হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
یَمۡحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ.
অর্থ : আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-সাদাকাকে বর্ধিত করেন। [সূরা বাকারা : ২৭৬]
অর্থাৎ, আল্লাহ দান-সাদাকার বদৌলতে পৃথিবীতে ধন-সম্পদে বরকত দেন এবং পরকালে বহুগুণে বিনিময় দান করেন। [তাফসিরুল কুরতুবি, ৩/৩৬২]
এ জন্য সব সময় দান-সাদাকা করতে থাকা চাই। এটা মানুষের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়।
৫. দোয়া করা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন করতে দোয়া কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ
অর্থ : একমাত্র দোয়াই পারে তাকদিরকে পরিবর্তন করে দিতে। [সুনান তিরমিযী, ২১৩৯]
৬. আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَن سَرَّهُ أنْ يُبْسَطَ له في رِزْقِهِ، أوْ يُنْسَأَ له في أثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ.
অর্থ : যে ব্যক্তি চায় যে, তার রিযিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি পাক, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে। [সহিহ বুখারি, ২০৬৭]
এ কাজগুলোর পাশাপাশি কেউ যদি যদি জীবিকার জন্য যথাযথ চেষ্টা অব্যাহত রাখে এবং পার্থিব জগতে ভালো থাকার সম্ভাব্য উপায়-উপকরণ অবলম্বন করে, তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তার ভাগ্যে ভালো কিছু রাখবেন। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।